হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

রক্তদান মানবতার এক মহান কাজ। তবে রক্ত দেওয়ার আগে কিছু শারীরিক মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হিমোগ্লোবিনের মাত্রা। অনেকেই প্রশ্ন করেন— “হিমোগ্লোবিন কত

হিমোগ্লোবিন -কত -হলে -রক্ত -দিতে -হয়

হলে রক্ত দেওয়া যায়?” এই প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে রক্তদান যেমন দাতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তেমনি গ্রহীতার জন্যও সমস্যার কারণ হতে পারে।

পেজ সূচিপএ : হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

হিমোগ্লোবিন কী?

হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকায় (RBC) থাকা এক ধরনের প্রোটিন, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যায়। 

আরো পড়ুন : জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই

  • এর মূল উপাদান হলো লোহা (Iron)।

  • হিমোগ্লোবিন কম হলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে রক্তশূন্যতা (Anemia) হয়।


স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা

সাধারণত স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হলো:

  • পুরুষ: ১৩.৫ – ১৭.৫ g/dL

  • নারী: ১২ – ১৫.৫ g/dL

  • শিশু: বয়সভেদে ভিন্ন হতে পারে (প্রায় ১১ – ১৬ g/dL পর্যন্ত)


রক্ত দেওয়ার জন্য হিমোগ্লোবিন কত থাকা জরুরি?

বিভিন্ন দেশে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও, বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিকভাবে সাধারণ নিয়ম হলো—

  • পুরুষদের ক্ষেত্রে: ন্যূনতম ১৩ g/dL

  • নারীদের ক্ষেত্রে: ন্যূনতম ১২.৫ g/dL

👉 অর্থাৎ, যদি হিমোগ্লোবিন এর নিচে থাকে, তবে রক্তদান করা উচিত নয়।

আরো পড়ুন : লিনডাক ২০০ এর কাজ কি


কেন হিমোগ্লোবিনের সীমা জরুরি?

  1. দাতার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় – কম হিমোগ্লোবিন থাকলে রক্ত দিলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

  2. গ্রহীতার উপকারে – পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন না থাকলে দানকৃত রক্তও মানসম্মত হয় না।

  3. অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে – আগে থেকেই যাদের রক্তশূন্যতা আছে তারা যদি রক্ত দেন, তাহলে তাদের অবস্থা খারাপ হতে পারে।


আরো পড়ুন : ব্লগিং কীভাবে শুরু করা যায় – নতুনদের জন্য সম্পূর্ণ গাইড

রক্ত দেওয়ার অন্যান্য যোগ্যতা

শুধু হিমোগ্লোবিন নয়, রক্তদানের জন্য আরও কিছু শর্ত মানতে হয়:

  • বয়স: ১৮ থেকে ৬০ বছর

  • ওজন: ন্যূনতম ৫০ কেজি

  • শরীরে বড় কোনো রোগ না থাকা (ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হেপাটাইটিস ইত্যাদি থাকলে রক্ত দেওয়া যায় না)

  • অন্তত ৩ মাস আগে রক্ত দেওয়া থাকতে হবে

  • গর্ভবতী বা সদ্য সন্তান জন্মদান করা নারীরা রক্ত দিতে পারবেন না

আরো পড়ুন : ছেলেদের ফেসবুক স্ট্যাটাস 2025

রক্ত দেওয়ার আগে করণীয়

  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা

  • খালি পেটে রক্ত না দেওয়া

  • আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

  • পর্যাপ্ত পানি পান করা


হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়

যাদের হিমোগ্লোবিন কম, তারা খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলে দ্রুত উপকার পেতে পারেন:

আরো পড়ুন : লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা

  • লাল মাংস, লিভার

  • ডাল, ছোলা, মসুর

  • শাক-সবজি (পালং শাক, কলমি শাক)

  • ফল (আপেল, খেজুর, ডালিম, আঙুর)

  • ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার (লেবু, কমলা) – আয়রন শোষণে সহায়ক


কম হিমোগ্লোবিন হলে ঝুঁকি

  • দুর্বলতা, মাথা ঘোরা

  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

  • শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অক্সিজেনের ঘাটতি

  • দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ ও জটিলতা

👉 তাই কখনোই কম হিমোগ্লোবিন নিয়ে রক্ত দেওয়া উচিত নয়।

আরো পড়ুন : জিফোরেট 5 খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

🔍 হঠাৎ রক্ত কমে যাওয়ার সাধারণ কারণসমূহ

🩸 ১. রক্তক্ষরণ (Bleeding)


🦠 ২. সংক্রমণ বা রোগের কারণে রক্তকণিকা নষ্ট হওয়া

  • ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু বা টাইফয়েডের মতো সংক্রমণ

  • ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে লোহিত রক্তকণিকার ক্ষতি

  • অটোইমিউন রোগ (যেমন: Autoimmune Hemolytic Anemia)


🥩 ৩. পুষ্টিহীনতা (Nutritional Deficiency)

  • আয়রন বা লৌহের ঘাটতি

  • ভিটামিন বি১২ বা ফলিক অ্যাসিডের অভাব

  • দীর্ঘদিন অপুষ্টিকর খাবার খাওয়া বা শোষণ সমস্যা (যেমন গ্যাস্ট্রিক সমস্যা)

💊 ৫. ওষুধ বা কেমোথেরাপির প্রভাব

  • কিছু ওষুধ (যেমন: কেমোথেরাপি, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল) রক্তকণিকা নষ্ট করে দিতে পারে।


🫀 ৬. দীর্ঘস্থায়ী রোগ (Chronic Diseases)

  • কিডনি রোগ

  • লিভারের রোগ

  • হরমোন বা মেটাবলিক সমস্যার কারণে রক্ত তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।


🧬 ৭. জেনেটিক বা বংশগত রোগ

  • থ্যালাসেমিয়া

  • সিকেল সেল অ্যানিমিয়া
    এগুলো হঠাৎ রক্ত কমিয়ে দিতে পারে, বিশেষত সংক্রমণ হলে।


🏥 করণীয়:

  • হঠাৎ দুর্বল লাগা, মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করান।

  • রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বাড়ান।

  • দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থাকলে নিয়মিত চেকআপ করুন।

মেয়েদের হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার?

মেয়েদের স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হলো—

  • ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার (g/dL)

👉 তবে রক্তদানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মেয়েদের ন্যূনতম ১২.৫ g/dL হিমোগ্লোবিন থাকতে হবে


কেন এই মান জরুরি?

  • যদি হিমোগ্লোবিন কম থাকে (১২ g/dL এর নিচে), তাহলে শরীরে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

  • কম হিমোগ্লোবিন নিয়ে রক্ত দিলে দাতার শরীরে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে।

  • রক্তের মানও কমে যায়, যা গ্রহীতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।


মেয়েদের জন্য হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর খাবার 🍎🥦🥩

  • লাল মাংস, লিভার

  • মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন

  • পালং শাক, কলমি শাক

  • ডালিম, খেজুর, আঙুর, আপেল

  • ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার (লেবু, কমলা) – আয়রন শোষণে সহায়ক


👉 সংক্ষেপে:
মেয়েদের স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন = ১২–১৫.৫ g/dL
রক্ত দেওয়ার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন = ১২.৫ g/dL

🩸 হিমোগ্লোবিন কম হলে কী খাওয়া উচিত?

১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার

👉 আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরির প্রধান উপাদান।

  • লাল মাংস (গরু, খাসি, খাসির লিভার)

  • মাছ (সামুদ্রিক মাছ, শোল, মাগুর)

  • ডিমের কুসুম

  • পালং শাক, কলমি শাক, লাল শাক

  • ডাল, ছোলা, মসুর, সয়াবিন


২. ফলমূল 🍎🍊

ফলে ভিটামিন ও আয়রন থাকে, যা রক্ত তৈরিতে সহায়ক।

  • আপেল

  • ডালিম

  • খেজুর

  • আঙুর, কিশমিশ

  • কলা

  • কমলা, মাল্টা (ভিটামিন C আয়রন শোষণে সাহায্য করে)


৩. শাকসবজি 🥦

  • বিটরুট

  • গাজর

  • টমেটো

  • ব্রকলি

  • কুমড়া


৪. ভিটামিন B12 ও ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার

👉 এগুলোও লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।

  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

  • ডিম

  • মাছ

  • সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি

  • ডাল

🚫 কোন খাবার কম খাওয়া উচিত?

হিমোগ্লোবিন বাড়াতে গিয়ে কিছু খাবার সীমিত রাখতে হবে:

  • অতিরিক্ত চা ও কফি ☕ (আয়রন শোষণ কমায়)

  • জাঙ্ক ফুড 🍔

  • অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার


✅ টিপস

  • আয়রন-সমৃদ্ধ খাবারের সাথে ভিটামিন C খেলে (যেমন কমলার রস + পালং শাক) আয়রন দ্রুত শোষিত হয়।

  • নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম ও পানি পান করা জরুরি।

  • প্রয়োজনে ডাক্তারি পরামর্শে আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে।


👉 সংক্ষেপে:
হিমোগ্লোবিন কম হলে লাল মাংস, মাছ, ডিম, শাক-সবজি (বিশেষত সবুজ শাক), ডাল, ডালিম, খেজুর, আঙুর, আপেল ও ভিটামিন C সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে।


উপসংহার

রক্তদান এক মহৎ কাজ হলেও দাতার স্বাস্থ্য আগে জরুরি। তাই রক্ত দেওয়ার আগে অবশ্যই হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করা উচিত। সাধারণভাবে পুরুষদের ন্যূনতম ১৩ g/dL এবং নারীদের ১২.৫ g/dL হিমোগ্লোবিন থাকলেই রক্ত দেওয়া নিরাপদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url